কক্সবাজারের চকরিয়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্ধের বিপরীতে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে উপ-বৃত্তির টাকা বিতরণে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় একই বিদ্যালয়ের কবির আহমদ নামের অপর এক সহকারি শিক্ষক বাদি হয়ে এব্যাপারে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহনের আবেদন জানিয়ে গত ২ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ওই শিক্ষকের নানা অনিয়মের কারনে স্থানীয় অভিভাবক মহলও চরমভাবে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন। অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম আনোয়ার হোসেন। তিনি বর্তমানে উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের ডুমখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন ২০০৯ সাল থেকে চলতি ২০১৬সাল পর্যন্ত টানা আটবছর ধরে সরকারিভাবে বরাদ্ধ দেয়া শ্লিপ কমিটির সমুদয় অর্থ বিদ্যালয়ের উন্নয়ন খাতে কোন ধরণের ব্যয় করেননি। এমনকি বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামত ও শিক্ষার্থীদের পোশাক বিতরণের কথা থাকলেও তিনি বরাদ্ধের ওই টাকা খরচ করেনি। পক্ষান্তরে তিনি আটবছর ধরে বিদ্যালয়ের আয় ব্যয়ের হিসাবও যথাযথ কতৃপর্ক্ষের কাছে উপস্থাপন করেনি। অপরদিকে চলতিবছর বিদ্যালয় উন্নয়নখাতে সরকারিভাবে শ্লিপ কমিটির নামে বরাদ্ধ দেয়া ৪০ হাজার টাকা, ক্রীড়া উপকরণ বাবত দেয়া পাঁচ হাজার টাকা, প্রাক প্রাথমিক বাবত দেয়া পাঁচ হাজার টাকা এখনো নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগটিতে আরো দাবি করা হয়েছে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন ২০১৫ সালের জুলাই মাস থেকে চলতিবছরের জুন মাস পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারিভাবে দেয়া উপ-বৃত্তির টাকা বিতরণেও তিনি নানাভাবে অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন। উপবৃত্তির টাকা বিতরণের জন্য কার্ড দিয়ে তিনি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। এতেকরে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী সরকারিভাবে দেয়া উপবৃত্তির টাকা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অভিযোগটিতে দাবি করা হয়, উল্লেখিত সময়ে সরকারিভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য ১লাখ ৪১হাজার ৯শত টাকা বরাদ্ধ দেয়া হলেও নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বিতরণ করেছেন ৯৩ হাজার ৬শত টাকা। অবশিষ্ট টাকা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা আবু জাফর ও টাকা বিতরণে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারা প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগসাজস করে হরিলুট করেছেন।
স্থানীয় অভিভাবক মহল প্রশ্ন তুলেছেন, উপজেলা শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের কর্তব্য অবহেলার কারনে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের আর্থিক তহবিল নিয়ে নানাভাবে অনিয়মে জড়িয়েছে। তা না হলে সরকারিভাবে বিদ্যালয়ের উন্নয়নখাতে বিপুল পরিমাণ টাকা বরাদ্ধ দেয়ার পর প্রধান শিক্ষক আটবছর ধরে ওই টাকা খরচ না করে কিভাবে নিজের কাছে রেখে দেন।
এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্ধ অভিভাবকসহ সচেতন এলাকাবাসি তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো.আনোয়ারুল কাদের বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে দায়ের করা অভিযোগের কোন কপি আমার হাতে আসেনি। তাই আমি বিষয়টি সম্পর্কে বেশি কিছু বলতে পারছিনা। তবে কপিটি আমার হাতে আসলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আবার ইউএনও’র স্যার নিজেও বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারেন। #
পাঠকের মতামত: